লাল সবুজেরবিজয়

তারিখ: 13 ডিসে. 2018

লেখক: মোঃ ইমদাদুল খান সোহেল

বছর ঘুরে ১৬ই ডিসেম্বর আবারও বাঙালি জাতির সামনে বিজয় নিয়ে হাজির। এই তারিখটিকে সম্মুখে রেখে জাতি পালন করে তার অর্জিত শ্রেষ্ঠ দিনটি। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের প্রতিটি মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এই মহান দিনটিকে বরণ করে নেয়, আপন করে নেয় তার বিজয়উল্লাসকে।

ক্যালেন্ডারের পাতায় সাল তখন ১৯৭১। নয় মাস যুদ্ধের পর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে রচিত হলো বাঙালি জাতির বিজয়। দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এদেশ অর্জন করে তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। দখলদার শাসকগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশ নামক নতুন এক দেশের উদয় হয় পৃথিবীর মানচিত্রে। এই বিজয়ের আলোয় ধীরে ধীরে আলোকিত হতে থাকে পৃথিবীর বৃহত্তম এই বদ্বীপ আর এখানকার মানুষের মন।  এদেশের প্রতিটি পথ-প্রান্তর সাক্ষী হয় নতুন এক বিস্ময়ের।

কিন্তু এ বিজয় এত সহজে তো আসেনি। কাঙ্ক্ষিত কোনো জিনিস পেতে হলে জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। তাই আমাদের প্রিয় লাল সবুজের এই বিজয়ে রয়েছে অনেক ত্যাগের গল্প। এই ত্যাগ শুধু বিজয় নিশ্চিত করে থেমে থাকে না। বরং কিছু মানুষ তাদের ত্যাগ ও কর্তব্য দিয়ে এই বিজয়কে মহিমান্বিত করে রাখে। একাত্তর-পরবর্তী সময়ে অনেকেই অর্জিত বিজয়কে আরও সু-প্রতিষ্ঠিত করতে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে গড়ে তুলেছেন। যুদ্ধে সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলোর পাশে থেকে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। গৃহহীন মানুষের জন্য বাসস্থান, অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করেছেন। সময়ের প্রয়োজনে এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা। ব্র্যাক তার মধ্যে অন্যতম।

একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর আর চলতি বছরের মাঝখানে কেটে যাচ্ছে বাঙালির বিজয় গৌরবের ৪৭টি বছর। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ আমরা আরও একটি বিজয় দিবসের সম্মুখে। ৫০ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করার পথে আমরা। সময় এসেছে খতিয়ে দেখার। বিজয়ের এতগুলো বছর পরও আমরা বিজয়ের সাফল্য কতটুকু ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি কিংবা জাতির প্রয়োজনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু এগোতে পেরেছি।

অর্জিত এই বিজয়কে এগিয়ে নিতে জাতির প্রয়োজন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক বিজয়। শিক্ষার বিজয়ও অপরিহার্য। সর্বোপরি দরকার ব্যক্তি-স্বাধীনতার বিজয়। সমাজ তথা দেশ-উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীর বিজয়ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নারীর বিজয়ের পথে প্রথম ধাপ নারীর ক্ষমতায়ন। এর মাধ্যমেই দেশের পরিবারগুলো থেকে উঠে আসতে পারে আরও অসংখ্য বীর সৈনিক যারা বিশ্ব দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। একাত্তরে নারী যেমন পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বাংলার বিজয় নিশ্চিত করেছে, ঠিক তেমনিভাবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীসমাজের পরিপূর্ণ বিজয় নিশ্চিত করে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

এজন্য দরকার প্রথমেই একজন পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন। পুরুষ তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে সর্বক্ষেত্রে নারীকে সুযোগ করে দিতে পারে। সমাজে আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। সেটা কারও একার দোষ নয়। বহুকাল ধরে লালিত বিভিন্ন বিশ্বাস আমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নারীর প্রতি চলছে সহিংসতা। এই অবস্থার পরিবর্তনে পুরুষদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে যার যার অবস্থান থেকে। প্রতিটি স্তরেই নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই-না বিজয়।

নারীদের পাশাপাশি আমাদের শিশুদের বিজয়ও নিশ্চিত করতে হবে। একজন শিশু বেড়ে উঠবে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে। রাষ্ট্র শিশুর সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তার পথচলাকে সুগম করতে কাজ করছে। পরিবারকেও এই কার্যক্রমে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে শিশুর বিজয় অর্জনে। একজন শিশু তার প্রথম শিক্ষা পরিবার থেকে পেয়ে থাকে। তাই অভিভাবকদের উচিত রাষ্ট্রীয় দিবসগুলোতে শিশুদের যত বেশি সম্ভব সম্পৃক্ত করা।

বিজয় দিবসকে সামনে রেখে শিশুদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান আমরা অনুষ্ঠিত হতে দেখি। এসব অনুষ্ঠানে শিশুদের নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের সুযোগসুবিধা আরও বাড়ানো ও নিয়মিত করা প্রয়োজন। বিজয় দিবস এলেই আমরা দেখি বিভিন্ন বয়সী শিশুদের জন্য নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিশুরা কোমলমতি, তাই তাদের বিজয়ের অনুষ্ঠানগুলোকে তাদের উপযোগী করে সাজানো দরকার।

কোনো বিজয়ই একদিনে অর্জিত হয় না। এই অর্জনে থাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। আর লক্ষ্য ঠিক রেখেই সম্মুখে এগিয়ে চলতে হয়। এই পথে পথিককেও থাকতে হয় অবিচল। তবেই বিজয় হয় নিশ্চিত এবং অনিবার্য।

ছবিঃ উইকিপিডিয়া

0 0 votes
ব্লগটি কেমন লেগেছে?