নবজাতককে সঙ্গে নিয়ে অফিসে যাওয়া, সময়মতো বুকের দুধ খাওয়ানো এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা একজন মায়ের জন্য মোটেও সহজ কাজ নয়।
হোক তা সাধারণ কোনো সমস্যা কিংবা জটিল, ব্র্যাক সবসময় বাস্তবসম্মত ও সর্বোত্তম সমাধানের জন্য চেষ্টা করে থাকে। এ বিষয়ে আবেদ ভাই ও আমিন ভাইয়ের একটি কথোপকথন* বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যা ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্পষ্ট করে। সেই কথোপকথন ছিল এরকম–
ব্র্যাকের প্রোজেক্ট দেখতে গিয়ে আবেদ ভাই প্রায়ই দেখতেন, ঋণ নেওয়ার জন্য অনেক মানুষ অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছে। তিনি তখন মন্তব্য করেন, ‘আমিন, মানুষ মাত্র ৪-৫ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। এতে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। অথচ তাদের সবারই কিন্তু ব্যস্ততা আছে।’
আমিন ভাই উত্তরে বললেন, ‘আবেদ ভাই, আমিও ভাবছিলাম কীভাবে এর সমাধান করা যায়। সেজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন থেকে আর কাউকে কাল এসো বলব না। বরং নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেব। যেমন- সকাল দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে এই ৬ জন এবং এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে অন্য ৬ জন ঋণ পাবে। এতে আর তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।’
আসলে এই কথোপকথনের ভেতরেই লুকিয়ে আছে ব্র্যাকের ভাবনার এক গভীর সূত্র। মানুষের প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ব্র্যাক সবসময় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নেয় নানা উদ্যোগ।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ব্র্যাকের অফিসগুলোতে প্রতিদিন শুধু নারী কর্মীরা নয়, বহু নারী সদস্যও যাতায়াত করেন। অনেকক্ষেত্রে কাজের প্রয়োজনে তাদেরকে দীর্ঘ সময় অফিসে থাকতে হয়। অনেকে আবার শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে আসতে পারেন না, তাই সঙ্গে নিয়েই আসেন।
ব্র্যাকের অফিসগুলোতে একসময় এমনও দেখা গেছে – সন্তানের খিদে পেয়েছে, তাই কান্না করছে। আর তার মা সহ্য করতে না পেরে দরকারি কাজ ফেলে রেখেই বাড়ি ফিরে গেছেন। এই বাস্তবতা থেকেই ব্র্যাক ‘বেবি ফিডিং কর্নার’ চালু করেছে।
কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন সহায়তা, মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্র্যাক অফিসগুলোতে আছে ‘জেন্ডার মার্কার’ টুল। এর বাস্তবায়ন কর্মপরিবেশকে আরও জেন্ডার সংবেদনশীল করে তোলে।
২০২৪ সালে ব্র্যাকের ১ হাজার অফিসে পরিচালিত জেন্ডার ক্লাইমেট জরিপে দেখা যায়, ৯২% অফিসেই নিরিবিলি ও আরামদায়ক পরিবেশসহ ‘বেবি ফিডিং কর্নার’ রয়েছে, যা সপ্তাহে গড়ে ১২ জন মা ব্যবহার করে থাকেন।

বেবি ফিডিং কর্নার
পরবর্তী জরিপটি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫০টি জেলার ৮৩টি অফিসে বেবি ফিডিং কর্নার ব্যবহার করা ১শ জন মাকে নিয়ে পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, ৯১% মা ‘বেবি ফিডিং কর্নার’-এর সেবায় সন্তুষ্ট।
একজন মা যখন নিশ্চিন্তে শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন, তখন তিনি তার কাজেও পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন। এ কারণেই ব্র্যাকের প্রতিটি অফিস ধীরে ধীরে এমন এক নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশে রূপ নিচ্ছে, যেখানে কর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন এবং কর্মসূচির সদস্য মায়েরা যত্ন ও মর্যাদার সঙ্গে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
ব্র্যাকের এই পদক্ষেপ কেবল একটি প্রতিষ্ঠানিক অঙ্গীকার নয়, বরং মানবিক দায়িত্ববোধেরই প্রকাশ, যেখানে একটি ছোট কর্নারেই লুকিয়ে থাকে সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতার অঙ্গীকার।
*আমিন ভাই (মো:আমিনুল আলম) তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে ব্র্যাকের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেছেন। সবশেষ ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। আবেদ ভাই ও আমিন ভাইয়ের কথোপকথনের অংশটুকু ‘মাঠের মানুষ’ বইটি থেকে নেওয়া হয়েছে।
তরু এ্যাডলিন ব্যাপারী ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচিতে কমিউনিকেশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।



