বিশ্বের অন্যতম জনাকীর্ণ শহর ঢাকা। এই শহরে ১ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। লোকসংখ্যা বেশি কিন্তু পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নেই। ফলে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত এই শহরের বাসিন্দারা। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শহরবাসীর কাছে দিনকে দিন চিকিৎসা ব্যয় অসহনীয় হয়ে উঠছে। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। তাদের মোট খরচের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। ঠিক এ কারণেই প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় উল্লেখিত ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে মা ও শিশু মৃত্যুহ্রাস অন্যতম। এই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বিশেষত, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব-স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম উদাহরণ। এরই সঙ্গে দেশটিকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের, যার মধ্যে অন্যতম অসংক্রামক রোগ। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগ অর্থাৎ হৃদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০১২) মতে, শতকরা ৫৯ জনের মৃত্যু হচ্ছে অসংক্রামক রোগের কারণেই। ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হওয়া-এই দুইয়ের কারণে রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার প্রতি অনীহা দেখা দিচ্ছে।
মানসম্মত ও কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ব্র্যাক সম্প্রতি চালু করেছে ৬টি আরবান হেলথ সেন্টার। নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই গড়ে উঠেছে আরবান হেলথ সেন্টারগুলো। বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত এই হেলথ সেন্টারগুলো জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা নিয়েই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন এই হেলথ সেন্টারগুলো সম্পর্কে ধারণা দেন। রোগীদেরকে সেবাসংক্রান্ত সকল তথ্য জানানো হয়। প্রয়োজনে তাদের হেলথ সেন্টারের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। বলা যায় এই কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা হচ্ছেন রোগী ও আরবান হেলথ সেন্টারের মধ্যে সেতুবন্ধনের মতো।

হেলথ সেন্টারগুলোতে সপ্তাহ জুড়ে ৪০জন ডাক্তার সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও মেডিকেল অফিসারগণ মেডিসিন, নাক-কান-গলা, শিশু ও প্রসূতি বিভাগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন। সেবা নিতে আসা প্রত্যেকেই উন্নত চিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্ট।
প্যাথলজি বিভাগে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্টের সহায়তায় ল্যাবরেটরি টেস্টগুলো করা হয়। কারণ রোগ নির্ণয়ের এই পর্যায়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সনোলজিস্ট এবং চিকিৎসকগণ ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো করে থাকেন। আধুনিক মানের এই আরবান হেলথ সেন্টারে প্যাথলজি খাতে খরচ হয় অন্য যেকোনো ডায়গনিস্টিক সেন্টার চাইতে ২০-২৫শতাংশ কম। সেবাগ্রহণকারীদের সাধ্যের মধ্যেই এই সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ছয়টি আরবান হেলথ সেন্টারের প্রতিটিতেই রয়েছে আয়েশা আবেদ ডেলিভারি ইউনিট। এখানে গর্ভবতী মায়েদের সন্তান জন্মদানের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সেবা পাওয়া যায়। অভিজ্ঞ ও দক্ষ ধাত্রীগণ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে নরমাল ডেলিভারি করেন। সন্তান জন্মদানের পর মা ও শিশুর জন্য রয়েছে আলাদা বিশ্রাম কক্ষ।
আজকাল অনেকেই বাজার থেকে নকল ওষুধ কিনে ঠকছেন। আমাদের ফার্মেসিগুলোতে ৩০টি ওষুধ কোম্পানি থেকে সরাসরি ওষুধ ক্রয় করা হয়। এর ফলে ন্যায্যমূল্যে আসল ওষুধ পাচ্ছেন রোগীরা। প্রত্যেকটি আরবান হেলথ সেন্টারের সঙ্গেই আছে ফার্মেসি যেখান থেকে রোগীরা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনতে পারবেন।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির আরবান হেলথ সেন্টারগুলোর মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদানের এই যাত্রায় ভবিষ্যতে যোগ হবে আরও নতুনমাত্রা । এই নগরীর সকল বাসিন্দা পাবে সাধ্যের মধ্যে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ।



