পানি কখনও বয়ে আনে শান্তি, কখনও কারণ হয় সংঘর্ষের। এই পানির অধিকার ও প্রাপ্যতাও সব মানুষের জন্য সমান নয়।
এর উদাহরণ মেলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্রভূমিতে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের সামগ্রিক প্রভাবে ক্রমাগত হারে কমছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ঘন ঘন খরা ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এ অঞ্চলে কৃষকরা চিরাচরিত ফসলের বদলে এমন সব ফসল চাষে বাধ্য হচ্ছেন, যেটাতে খুব বেশি পানির প্রয়োজন হয় না।
এর ফলে ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকদের কাজের সুযোগ কমে গেছে। যাদের বেশিরভাগই আদিবাসী সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য। আসন্ন সংকট সেখানকার মানুষের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি করছে। বাধাগ্রস্ত করছে স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলোকে।
পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সহনশীলতা, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি।
আমাদের বাড়িতে কোনো কল থাকে না। যতটুকু খাবার পানি দরকার হয়, সেটা কিনে নিতে হয় অন্য মানুষের পাম্প থেকে।
আমাদের গ্রামের একমাত্র কুয়াটি প্রায় ১২ বছর আগে শুকিয়ে গেছে।
এই যে সাপের মতো এঁকেবেঁকে যাওয়া যে পাইপটি দেখছেন, সেটিই আমাদের খাবার পানির একমাত্র উৎস।
আমার মতো মেয়েরা হাতে আর কাঁখে যতগুলো সম্ভব পানির পাত্র নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকবার আশেপাশের পুকুর বা পাম্প থেকে পানি আনতে যায়।
সেই পানি আমরা গবাদি পশু, ফসল আর নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিই।
সমান টাকা দিয়েও সবাই সমান পানি পায় না।
পানির জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় বলে গ্রামের মানুষের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে।
ভালোভাবে বাঁচার জন্য অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।
আমি কোথাও যাচ্ছি না। সমস্যা দেখে পালিয়ে গেলে কি কোনো কিছুর সমাধান হয়?
জেরিন টুডু
বন্ধুপাড়া, নওগাঁ