১১ই নভেম্বরের গভীর রাত। নেমে এলো ভয়াবহ বিপর্যয়, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে যেন নেমে এলো খণ্ডপ্রলয়।
একরাতের ব্যবধানে এত ধ্বংস, এত মৃত্যু এর আগে আর কখনও কেউ দেখেনি। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ।
পরের দিন বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াতে আরও অসংখ্য মানুষের মতো ছুটে গিয়েছিলেন একজন ফজলে হাসান আবেদ, শেল কোম্পানির হেড অফ ফাইন্যান্স- দেশবিখ্যাত কেউ নন। সেদিনের সেই পদক্ষেপ ছিল একটি বৃহত্তর অভিযাত্রার প্রথম ধাপ। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সেদিনই যাত্রা শুরু হয়েছিল।
জানুয়ারি
ফেব্রুয়ারি
কুড়িগ্রামের রৌমারিতে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসে ব্র্যাক। ক্ষুধার্ত জনপদে কাজ করতে গিয়ে আবেদ ভাই নারীর অবস্থান সম্পর্কে প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত সত্য আবিষ্কার করেন। এখানে ব্র্যাক মাত্র ৪ মাস জরুরি ত্রাণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, যা কাজে লেগেছে ৪০ বছর পরে এসেও।
সেবছরই মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি শুরু করে ব্র্যাক।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের শুরু থেকেই আবেদ ভাই নারী শক্তির গুরুত্ব ও অপরিহার্যতাকে উপলব্ধি করেছিলেন। সেই উপলব্ধিতে প্রতিফলিত হয় সার্বজনীনতা, যা আজ ব্র্যাকে একটি মূল্যবোধ হিসেবে চর্চা করা হয়।
এই চিন্তা থেকে জামালপুর মহিলা প্রজেক্ট শুরু করে ব্র্যাক। গ্রামের দরিদ্র নারীদের শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, হাঁস-মুরগি পালনসহ যৌথ সঞ্চয় এবং সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের আওতায় আনা হলো।
বিগত বছরগুলোতে নানা ধরনের সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আবেদ ভাই বিস্তর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। সেইসব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এবার মানিকগঞ্জে শুরু করলেন সমন্বিত প্রকল্প।
কৃষি, হর্টিকালচার, গবাদি পশুপালন, রিকশা ও ভ্যান চালানো, ছোটো ব্যবসায় এসব কাজের সুযোগ থাকায় মানুষকে একক ঋণ দিতে শুরু করে ব্র্যাক। আবেদ ভাইয়ের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, এই লক্ষ্যে তিনি কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করলেন। আমরা পেলাম কার্যকারিতার দৃষ্টান্ত।
কার্যকারিতার এই ধারাবাহিকতায় শুরু হলো দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ- দিনমজুর, মৎস্যজীবী, কুমার ও তাঁতিদের নিয়ে দল গঠন করে গ্রাম সংগঠন গড়ে তোলা। এই সংগঠনে নিয়মিত সাপ্তাহিক সভা আয়োজনের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধান, অর্থনৈতিক, দক্ষতা অর্জন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হতো এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হতো।
পরবর্তী
শুরু হয়ে গেছে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনায় আসছে চ্যালেঞ্জ, দেখা দিচ্ছে প্রতিকূল পরিস্থিতি।
মানিকগঞ্জে মুরগিপালনের শুরুর দিকে ব্র্যাক উপলব্ধি করল মুরগি বাঁচিয়ে রাখতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যেহেতু অনেক হাঁস-মুরগি ক্রমাগত মারা যাচ্ছিল। ব্র্যাক এগিয়ে এলো সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী মনোভাব নিয়ে। শুরু হলো ভ্যাকসিনেশন, সেই ভ্যাকসিন নিরাপদে আনা নেওয়া করতে ইনস্যুলেটর হিসেবে পাকা কলার ব্যবহার করা হতো।
শুরু হলো আড়ং-এর যাত্রা। লোকশিল্পের শিল্পমূল্য এবং এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে ভিন্ন মাত্রা এতে দিতে শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। আয়েশা আবেদ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দরিদ্র কারুশিল্পীদের জীবনমান বদলে দেবার এক বিশাল দায়িত্ব।
উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা এবং কার্যকারিতার এক অপূর্ব সমন্বয়ে শুরু হলো রেশমচাষ। সার্বজনীনতার উদ্দেশ্যে তুঁতচাষসহ নার্সারি পরিচালনায় উৎসাহ দিতে থাকল ব্র্যাক।
আড়ং-এর একনিষ্ঠতায় নতুন করে প্রাণ পেল এদেশের গর্ব জামদানি শাড়ি। এই সাংস্কৃতিক অভিযানে ফিরে এসেছে অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্য, তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান।
১৯৮০
-
১৯৯০